অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারত কোনও ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নয় বলে মন্তব্য করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তার মতে, সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের ফলালফই এই সত্য সামনে এনেছে।
এছাড়া বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বিনা বিচারে বন্দি রাখার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়েও অসন্তোষ জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বুধবার জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত যে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নয় তা সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সবার সামনে এই সত্যটি তুলে ধরেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় পৌঁছে এই মন্তব্য করেন তিনি। নতুন ব্যবস্থার অধীনেও বিরোধীদের ‘বিনা বিচারে’ কারাগারে রাখা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অমর্ত্য সেন।
বুধবার সন্ধ্যায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘ভারতবর্ষ যে হিন্দুরাষ্ট্র নয়, নির্বাচনে ভারতীয় ভোটারদের সেই মতের প্রতিফলন ঘটেছে।’
অমর্ত্যর কথায়, ‘(বিজেপি) অনেক খরচ করে বড় মন্দির বানিয়েছে। এর দুটি দিক আছে। একটা হলো, ভারতবর্ষকে হিন্দুত্বের নিরিখে দেখা। মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসুর দেশে এটা হওয়ার কথা নয়।’
ভারতে ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ার কথা উল্লেখ করেও বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেন অমর্ত্য। তিনি বলেন, ‘ধনীদের ওপর বেশি নির্ভরশীলতা এবং দরিদ্রদের অবহেলা করার এই রীতি বহু দিন ধরেই এই সরকারে চলছে। যে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে, তা আগের মন্ত্রিসভার মতোই। মন্ত্রীরা সব একই। একটু রদবদল হলেও, রাজনৈতিক ভাবে যারা শক্তিশালী ছিলেন, তারা এখনও শক্তিশালী রয়ে গেছেন।’
অমর্ত্য সেন বিজেপি সরকারের আমলে বিনা বিচারে বিরোধীদের জেলে রাখারও অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় আশা করি প্রতিটি নির্বাচনের পর পরিবর্তন দেখতে পাব। আগে যা ঘটেছিল (বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে) লোকেদের বিনা বিচারে কারাগারে পাঠানো এবং ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর মতো কিছু ঘটনা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’
ভারতের বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, রাজনৈতিকভাবে মুক্তমনা হওয়া দরকার, বিশেষ করে যখন ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং এই দেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান রয়েছে। ৯০ বছর বয়সী অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আমি মনে করি ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’-এ পরিণত করার ধারণাটি সমীচীন নয়’।
নিজের অতীতের কথা স্মরণ করে নোবলেজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, তার শৈশবকালে ভারত যখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল, তখনও মানুষকে বিনা বিচারে জেলে পাঠানো হতো।
তিনি বলেন, ‘যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমার অনেক চাচা-চাচাতো ভাইকে বিনা বিচারে জেলে পাঠানো হয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম, স্বাধীন হলে ভারত হয়তো এটা থেকে মুক্ত হবে। তবে এটা থামেনি এবং এর জন্য কংগ্রেসও দায়ী। তারা এটা পরিবর্তন করেনি। … তবে, বর্তমান সরকারের অধীনে বিনা বিচারে আটক রাখার মতো কাজ আরও বেশি করে চলছে।’
ভারতের অর্থনীতি নিয়েও নিজের মত জানিয়েছেন অমর্ত্য। তিনি বলেন, ‘দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য অবহেলিত। বেকারের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতগুলোকে অবহেলা করা হচ্ছে। কংগ্রেস এবং বামপন্থি নিয়ে আপত্তির কথা তুলতে পারি। তবে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি এই বর্তমান সরকারের আমলে। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন করা দরকার।’
উল্লেখ্য, ১৯৩৩ সালের ৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা অমর্ত্য সেন একজন ভারতীয় বাঙালি অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
Leave a Reply